ঢাকাMonday , 10 February 2025
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন বিচার
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. গণমাধ্যম
  8. জনপ্রিয় সংবাদ
  9. জাতীয়
  10. বিনোদন
  11. রাজধানী
  12. রাজনীতি
  13. সারাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আওয়ামী লীগের মহা সংকটের ইতিহাস 

Link Copied!

আওয়ামী লীগের মহা সংকটের ইতিহাস

স্টাফ রিপোর্টারঃ ১৯৪৯ সাল মাওলানা ভাসানী সামসুল হকের নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় হাট খোলার ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনে। মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশ এবং কমিউনিস্ট পার্টির লোকজন এতে যুক্ত হন।

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দলটি পূর্ব পাকিস্তানে জনপ্রিয়তা লাভ করে। আর এই জনপ্রিয়তা লাভের পেছনে কারণ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ।পরে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামকরণ করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে দলটি ক্রমশ ক্ষমতা প্রিয় হয়ে যায়। যেখানে ১৯৫৭ সালে অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ প্রস্তাবিত পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন বিলটি পাস হয়। সেখানে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, আওয়ামী লীগ এই অবস্থান থেকে সরে আসে।

আর তাই ১৯৫৭ সালে ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনে মাওলানা ভাসানী দীপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করেন, যে শহীদ সাহেব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এই যদি হয় শেষ কথা তাহলে আমি এখান থেকেই ঘোষণা করতে চাই এবং পাকিস্তানের উদ্দেশ্য বলতে চাই, তোমাদেরকে আসসালামু আলাইকুম।এটাই ছিল স্বাধীনতার প্রথম আওয়াজ।

তারপরই পাকিস্তানের দুই অংশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে গঠিত হয় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ। যাতে যুক্ত হয়েছিলেন সীমান্ত গান্ধী খ্যাত আব্দুল গাফফার খান, খানে ওয়ালি, খান আ মজিদ সিন্দি, গাউসবকস বেজেনজা, আতাউল হক ওসমানী, মাহমুদুল, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, হাজী দানেশ, সৈয়দ আলতাফ হোসেন, চৌধুরী হারুনুর রশিদ, আহমেদুল কবির, পির হাবিবুর রহমান, মহিউদ্দিন আহমেদ, বরুণ রায়, আব্দুস সামাদ, আজাদ সরদার, ফজলুল করিম, অধ্যাপক আসহাবুর রহমান সহ দুই পাকিস্তানের প্রগতিশীল স্বাধীনচেতা জনপ্রিয় নেতৃবৃন্দ।

এরপর বৈরোতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরন করেন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। আওয়ামী লীগ অনেকটাই নেত্রীত্বহীন হয়ে পড়ে। এই দুঃসময়ে দলের হাল ধরেন মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্ক ভাগিস এবং খান আতাউর রহমান। কিন্তু দূভাগ্য যে তারা একসময় আওয়ামী লীগ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।

তারপর দলের নেতৃত্বে আসেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ছয় দফার ঘোষণা দিয়ে জেলে যান দল আবারো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। এগিয়ে এলেন ন্যাপ নেতা পীর হাবিবুর রহমান কিশোরগঞ্জ থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং চাঁদপুর থেকে মিজানুর রহমান চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক করে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া এবং জহুর হোসেন চৌধুরীর দুতিয়ালীতে ঢাক গঠন করেন।

অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ কমরেড মণি সিংহের আন্তরিক প্রচেষ্টায় মাওলানা ভাসানীকে এই লড়াই সংগ্রামে সচেষ্ট করেন। যার ফলশ্রুতিতে ৬৯ র গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। মুক্ত হয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র জনতা কর্তৃক বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন।

৭০ র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ বাঙালির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে করতে রাজি হননি। আর তাই ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা।

এই রক্তাক্ত যুদ্ধে ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির ছিল বিশাল অবদান । ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি এবং ছাত্র ইউনিয়নের ছিল ১৯,৩০০ সদস্যর গেরিলা বাহিনী ছাড়াও ছিল মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ।

তারপর অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ জাতিসংঘ সহ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন আদায়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ কমরেড মণি সিংহের আন্তরিক প্রচেষ্টায় তৎকালীন পরাশক্তি মহান সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন বাংলাদেশের পক্ষে নিয়ে আসেন।

ইহা কঠিন সত্য যে তত সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন বাংলাদেশের পক্ষে না আসলে ১০ বছর যুদ্ধ করেও আমরা স্বাধীনতা লাভ করতে পারতাম না।

কিন্তু অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও পরিতাপের বিষয় যে দেশ স্বাধীনতা লাভের পর সকলের আশা আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি জাতীয় সরকার হবে কিন্তু না আওয়ামী লীগ একক সরকার গঠন করে।

যার ফলশ্রুতিতে জাসদ নামের একটি উগ্র সংগঠনের জন্ম হয় এবং উগ্র কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের পরিস্থিতি হয় ঘোলাটে এবং ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে এসে ক্ষমতা গ্রহণ করেন কিন্তু দুর্ভাগ্য একটি বারো তাজউদ্দিন আহমেদ কে জিজ্ঞাসা করেননি কিভাবে দেশ স্বাধীন হলো। বরঞ্চ তাজউদ্দিনকে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত করেছেন যার ফলশ্রুতিতে গড়ে ৭৫ এর জঘন্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।

৭৫ র পর আওয়ামী লীগ আবার হোঁচট খেল। এগিয়ে এলেন জোহরা, তাজউদ্দীন, আব্দুল মালেক উকিল, ডঃ কামাল হোসেন, মহিউদ্দিন আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

তাদের উদার প্রচেষ্টায় দল ঘুরে দাঁড়ায় এবং ভারত থেকে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে শেখ হাসিনাকে দেশে নিয়ে আসার উদ্যোগ এবং বাস্তবায়ন করেন।

কিন্তু সেই পুরনো খেলা এসেই প্রথম আঘাতটা এই নেতৃ বৃন্দকেই করেন শেখ হাসিনা। তারপর তিনি হয়ে ওঠেন চরম স্বৈরাচারী। আস্তে আস্তে দলের ত্যাগী মেধাবী নেতা কর্মীরা দল থেকে দূরে সরতে থাকে। শেখ হাসিনা তার পরিবার হয়ে উঠে দলের সরবে সর্বা।

হাইব্রিড তৈল বাজদের বেষ্টনীর মধ্যেই তিনি চলে যান। আর রাষ্ট্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য চরম মৌলবাদী শক্তির সাথেও করেন সমঝোতা।

এই জন্যই আজ শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ মিত্রহীন হয়ে পড়েছে । আওয়ামী লীগ তথা শেখ পরিবার কখনো নিজেদের স্বার্থ আর ক্ষমতা ছাড়া দেশ ও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করেনি।

dailyalochitosangbad